আসসালামু আলাইকুম। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং সমস্যা হচ্ছে। আশা করা যায় গরমের তীব্রতা কমলে লোডশেডিং সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। আমাদের সম্মানিত গ্রাহকদের সাময়িক এই সমস্যার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার

নিরাপত্তার বিধি বিধান যথাযথভাবে অনুসরন পূর্বক অধিক ‍সতর্কতার সাথে কাজ করলে দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনার কারণ সমূহকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে- 

ক) কারিগরী।

খ) অকারিগরী।

গ) প্রাকৃতিক।

ক) দুর্ঘটনার কারিগরী কারণসমূহঃ
১. বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করার সময় সাট-ডাউন গ্রহণ না করা। 
২. অনিয়মতান্ত্রিক সাট-ডাউন গ্রহন।
৩. ভুল সাট-ডাউন।
৪. ফাজিং টেষ্ট /ভোল্টেজ টেষ্টার দ্বারা বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া।
৫. সোর্স ও লোড সাইডে সঠিক মানের তার দ্বারা অস্থায়ী গ্রাউন্ডিং না করা।
৬. সাইড কানেকশন, ডুয়েল সোর্স এবং জেনারেটর/বিকল্প সোর্স/অন্য পবিস এর
 সোর্স ইত্যাদি থাকা এবং কাজের সময় লাইন ক্যাপাসিটর ডিসচার্জ না করা। 
৭. ফিউজ কাট-আউটের ব্যারেল নীচে না নামিয়ে ঝুলিয়ে রাখা।
৮. লাইনের ত্রুটি নিরসন না করে এসিআর/ওসিআর/ব্রেকারের মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ লাইন  চালুর চেষ্টা করা। 
৯. যথাযথভাবে লাইন পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ না করা।
১০. ফিডার/ইক্ইুপমেন্ট ওভারলোডেড থাকা। 
১১. কানেক্টর না চেপে টুইষ্টিং করা। 
১২. একাধিক ফিডার/উপকেন্দ্রের মধ্যে লোড বিভাজন/লাইন স্থানান্তরের বিষয়টি রেকর্ড  না রাখা এবং সংশ্লিষ্টরা অবহিত না থাকা।
১৩. পুরাতন/জরাজীর্ণ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ/নবায়ন না করা। 
১৪. এসিআর/ব্রেকার এর সেটিং যথাযথ না থাকা। ট্রান্সফরমারে সঠিক সাইজের ফিউজ লিংক ব্যবহার না করা।
১৫. লুজ কানেকশন থাকা ও কন্ডাক্টর রেডহট হওয়া। 

খ) দুর্ঘটনার অকারিগরী কারণসমূহঃ
১. বিদ্যুৎ কর্মীদের অজ্ঞতা ও অবহেলা এবং এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত চর্চা না করা।
২. অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও কাজের সময় ভুল/শর্ট-কাট  পদ্ধতি অবলম্বন করা।  
৩. সঠিকভাবে রাইট অফ ওয়ে না করা । 
৪. লাইন ক্লিয়ারেন্স যথাযথ না থাকা। নির্ধারিত দূরত্ব না মেনে ঘরবাড়ি তৈরী এবং গাছ লাগানো। 
৫. অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার, সাইড কানেকশন, মিটার ও সিটি/পিটি ট্যাম্পারিং ইত্যাদি। 
৬. ওয়্যারিং-এ নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা এবং ওয়্যারিং সঠিকভাবে না করা।
৭. কাজের পরিকল্পনা না থাকা এবং লাইন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকা।
৮. শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য না থেকে লাইনে কাজ করা।
৯. নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি না করে কাজ আরম্ভ করা।  
১০. পোল নাম্বারিং ও  সিষ্টেমের তথ্যাদি আপডেট না রাখা।
১১. মাসিক নিরাপত্তা মিটিং/কারিগরী সেমিনারের সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন না করা। 
১২. বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়ে অজ্ঞতা অসাবধানতা উদাসীনতা ও সমন্বয়হীনতা।
১৩. নিরাপত্তা বিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন না করা এবং যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন না মানা।

গ) প্রাকৃতিক দুর্ঘটনার কারণসমূহঃ
প্রাকৃতিক কারণসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যেমন- 
১. বাযুমন্ডলীয় দুর্যোগসমূহঃ
     ঝড়, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডো, হারিকেন, জলোচ্ছ্বাস।
২. ভূ-পৃষ্ঠের দুর্যোগসমূহঃ
    বন্যা, নদীতীর ভাঙন, উপকূলীয় ভাঙন,ভূমিধ্বস, মৃত্তিকা ক্ষয়, অগ্নিকান্ড।
৩. ভূগর্ভস্থ দুর্যোগসমূহঃ
      ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাত।

 

দূর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়াদিঃ

ক) লাইম্যানদের জনগণের করণীয়ঃ

১.  পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক সার্ভিস অর্ডার প্রদান, বিদ্যুৎ কর্মীদের নিরাপত্তামূলক বিষয়ে প্রতিনিয়ত চর্চা করা  এবং কার্যক্ষেত্রে  নিয়ম মেনে চলা।

২.  নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাট-ডাউন গ্রহণ এবং প্রদান করা।

৩.  ফিাজিং টেস্ট/ভোল্টেজ টেস্টার দ্বারা বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া।

৪.  সোর্স ও লোড সাইডে গ্রাউন্ডিং সেট ব্যবহার করে অস্থায়ী গ্রাউন্ডিং নিশ্চিত করা।

৫.  সাইড কানেকশন, ডুয়েল সোর্স এবং জেনারেটর/বিকল্প সোর্স/অন্য পবিস এর সোর্স ইত্যাদি আছে কি-না পরিদর্শন করা এবং

     কাজের সময় লাইন ক্যাপাসিটর ডিসচার্জ করা।

৬. অতিরিক্ত আত্ববিশ্বাস ও কাজের সময় ভূল/মর্ট-কাট পদ্ধতি পরিহার করা।

৭.  ফিউজ কাট-আউটের ব্যারেল ঝুলিয়ে না রেখে নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখা।

৮.  এসিআর/ওসিআর/ব্যাকার ট্রিপ করলে লাইন পরিদর্শনপূর্বক ত্রুটি নিশ্চিত হয়ে ত্রুটিমুক্ত করে লাইন চালু করা।

৯.  সঠিক ভাবে রাইট অফ-ওয়ে করা এবং নির্ধাতি দূরত্ব মেনে ঘরবাড়ি তৈরি এবং গাছ লাগানো।

১০.  যথাযথ ভাবে লাইন পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। ফিডার/ইকুইপমেন্ট ওভার লোড নিরসন করা।

খ) সাধারণ জনগণের করণীয়ঃ

১.  খালি পায়ে ও ভেজা হাতে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কাজ করবেন না। অবশ্যই রাবার বা স্পঞ্জ এর জুতা/স্যান্ডেল পড়ে নিন এবং টেস্টার দ্বারা বিদ্যুৎ আছে কি-না তা পরীক্ষা করে নিন।

২.  বাচ্চাদের থেকে বৈদ্যুতিক সরঞ্চামাদি/বিভিন্ন বিদ্যুৎ পয়েন্ট নিরাপদ দূরত্বে রাখুন। অপ্রয়োজনীয় পয়েন্ট গুলো কসটেপ দিয়ে বন্ধ রাখুন।

৩.  আপনার আশে পাশে বিদ্যুৎ এর ছেড়া তার পড়ে থাকতে দেখলে  কখনো খালি হাতে ধরবেন না। অবশ্যই শুকনা কাঠ/বাঁশ/ইনসুলেটেড যন্ত্রপাতি (প্লায়ার) দ্বারা চলাচলের পথ থেকে সরিয়ে রাখুন এবং নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে খরব দিন।

৪.  গাছের ডাল/বাঁশ/ঘুড়ি বা অন্যান্য জিনিস বিদ্যুৎ লাইনে লেগে থাকরে তা কাটতে বা সরাতে যাবেন না। অবশ্যই বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে বিদ্যুৎ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কাজ করুন।

৫. পুকুরে/জলাশয়ে বিদ্যুৎ এর তার ছিড়ে পড়লে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ না করা পর্যন্ত কোন অবস্থায় পানিতে নামবেন না।

৬. বিদ্যুৎ এর তারের উপর বা কাছাকাছি কাপড় শুকতে দিবেন না। টানা তারে গরু/ছাগল বাধবেন না এবং কোন কারণে টানা তার ধরে টানাটানি করবেন না।

৭. বিদ্যুৎ লাইন থেকে নিরাপদ দূরত্বে ঘরবাড়ি নির্মাণ করুন এবং বিদ্যুৎ লাইনের আশে পাশে গাছপালা লাগানো থেকে বিরত থাকুন।

৮.  ঘরে/ফ্লাটে/বিল্ডিং-এ/লাইনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হলে বা আগুন লাগলে প্রথমেই মেইন সুইচ বন্ধ করুন এবং বিদ্যুৎ লাইনে হলে ফিডার বন্ধ করতে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করুন। অর্থাৎ বিদ্যুৎ এর সোর্স প্রথমেই বন্ধ করতে হবে।

 

দূর্ঘটনা পরবর্তী করণীয়ঃ

 .দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিকে উদ্ধার।

ক. তড়িতাহত ব্যক্তিকে প্রথমে স্পর্শ করা যাবে না।
খ. বিদ্যুৎ লাইনে সংযুক্ত অবস্থায় আছে অথবা পানি/স্যাতস্যাতে স্থানে দাড়িয়ে আছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে।
গ. বিদ্যুৎ লাইনে সংযুক্ত অবস্থায় থাকলে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ অথবা তড়িতাহত ব্যক্তিকে লাইন হতে মুক্ত করতে হবে।
ঘ. মুক্তকরণের কাজে শুষ্ক ইনসুলেটেড পদার্থ যেমন কাঠের টুকরা, রশি, শুকনা কাপড়, রাবার গ্লোভস ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঙ. কোন অবস্থাতেই চালু লাইন হতে তড়িতাহত ব্যক্তিকে ধাতব পদার্থ অথবা ভেজা পদার্থ দিয়ে ধরা যাবে না।

২.দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা।
ক. তড়িতাহত ব্যক্তিকে বিদ্যুৎ লাইন হতে সরিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে।
খ. তড়িতাহত ব্যক্তির পাল্স ও শ্বাসক্রিয়া চলছে কিনা নিশ্চিৎ হতে হবে।
গ. শ্বাসক্রিয়া না চললে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় শ্বাসক্রিয়া চালু করার চেষ্টা করতে হবে।
ঘ. হৃৎপিন্ডের স্পন্দন পাওয়া না গেলে বুকের উপরের হালকা চাপ দিতে হবে। 

৩.দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিকে ডাক্তারী চিকিৎসা।
ক. তড়িতাহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
খ. ডাক্তারী পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে|